কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম/Best Back pain relief exercise

কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম/Best Back pain relief exercise






আপনি কি অবিরাম পিঠে ব্যথার সাথে লড়াই করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন যা আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে বাধাগ্রস্ত করে। পিঠে ব্যথা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন কারণের কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল ভঙ্গি, পেশীর ভারসাম্যহীনতা, আঘাত এবং বসে থাকা জীবনধারা। বর্তমানে কোমর ব্যথা একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ কম বেশি অনেকেরই এই সমস্যাটা রয়েছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে কাজ করে অফিসে কিংবা বাসায়। আপনি কি কোমরের ব্যথা দূর করার জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তবুও কমতেছে না। তাহলে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করুন যা আপনার ব্যথা কে উপশম করতে সাহায্য করবে। তার মধ্যে যোগ ব্যায়াম হলো অন্যতম। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা কোমর ব্যথা দূর করার কিছু ঘরোয়া যোগাসন পদ্ধতি ছবিসহ আলোচনা করব। আশা করি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কোমর ব্যাথার কারন নির্ণয়



পেশীর স্ট্রেন, হার্নিয়েটেড ডিস্ক এবং মেরুদন্ডের মিসলাইনমেন্ট সহ বিভিন্ন কারণের কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, উত্তোলনের ভুল কৌশল এবং দুর্বল কোর পেশী সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কোন ব্যায়াম পদ্ধতি শুরু করার আগে আপনার ব্যথার মূল কারণ চিহ্নিত করা অপরিহার্য।

বাড়িতে বসে কোমর ব্যথা দূর করার যোগাসন পদ্ধতি।


১।ব্রিজপোজঃ

আমরা যারা যোগাসন করি তারা কম বেশি সবাই ব্রিসপোজ সম্পর্কে জানি।উপরের ছবি অনুসারে প্রথমে মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর হাঁটু বাঁকিয়ে পা দুইটা মেঝেতে খাড়া করে কোমর উপরে তুলুন হাত দুটো মেঝেতে সমতল অবস্থায় রাখুন। এ সময় শরীরের সম্পূর্ণ ভার দুই পায়ের গোড়ালি এবং কাঁধের উপর ভর করবে। সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন। এই ব্যায়ামটি ১৫ থেকে ২০ রিপিট করবেন।

উপকারিতা:কোমর ব্যাথা সারাতে এই পোজ বিশেষ উপকারী। এই ব্যায়ামের ফলে গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস নামক পেশী শক্তিশালী হয় যা কোমর ব্যাথা সারাতে সাহায্য করে।

২।চাইল্ড পোচঃ

বালাসন বা চাইল্ড পোস্ট কোমর ব্যথা এবং পিঠের ব্যাথা সারাতে বিশেষ উপকারি যোগাসন।এই আসনে প্রথমে হাঁটুর উপর বসুন। তারপরে হাত দুটো এক করে মাথার উপরে তুলুন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ুন। হাতের তালু মাটিতে থাকবে যতক্ষণ ভালো লাগে ততক্ষণ এই পোজটি করতে পারেন।


উপকারিতা:এই আসনের ফলে পিঠ নিতম্ব এবং উরু প্রসারিত হয় এবং মেরুদন্ডের ব্যথা উপশম করে হজমে সহায়তা করে।


৩।সাইড প্ল্যাঙ্কঃ

মেঝেতে শুয়ে পড়ুন কাঁদ হয়ে হাতের কনুই উপর ভর করে নিতম্ব উপরে তুলুন এক পা আরেক পায়ের উপর রাখুন। এ সময় মাথা থেকে পা পর্যন্ত এক সরলরেখা তৈরি হবে। ১০ সেকেন্ড করে পাস পরিবর্তন করুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন।


উপকারিতা:এ ব্যায়ামের যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে দুই পাশে চর্বি কমায় এবং পেটের মাসল শক্ত করে যা কোমর ব্যথা দূর সাহায্য করে।


৪।ক্যাট -কাউ পোজ(cat-cow):

এই আসনটির জন্য প্রথমে ডগি স্টাইল হতে হবে। এরপর আপনার পিঠ কুজো করতে হবে এবং তারপর মাথা উপরে ওঠাতে হবে। বারবার এভাবে করতে হবে। এই আসন টি সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মিনিট করতে পারেন।


উপকারিতা:এ যোগাসন নিয়মিত করার ফলে মেরুদণ্ড শক্ত হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। মেরুদণ্ড সংকোচনের পাশাপাশি পিঠ এবং পেটের সংকুচিত অংশ প্রসারিত হয় এতে পিঠের ব্যথা উপশমে পাশাপাশি কোমরের ব্যথা দূর করণে সাহায্য করে।


৫।হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ ঃ

টাইট হ্যামস্ট্রিং পিঠের ব্যথায় অবদান রাখতে পারে। মেঝেতে বসে এক পা প্রসারিত করে এবং অন্যটি বাঁকিয়ে, আপনার ভিতরের উরুর বিপরীতে প্রসারিত করুন। আপনার নিতম্ব থেকে সামনে ঝুঁকুন এবং আপনার পিঠ সোজা রেখে আপনার পায়ের আঙ্গুলের কাছে পৌঁছান।


৬।পাখি-কুকুর ব্যায়াম (Cat Dog)

পাখি-কুকুর ব্যায়াম ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা বাড়ায়। প্রথমে ডগি স্টাইল নিজেকে আনুন, একটি হাত সামনের দিকে প্রসারিত করুন, বিপরীত পা পিছনের দিকে প্রসারিত করুন। সংক্ষিপ্তভাবে ধরে রাখুন এবং পাশ পরিবর্তন করুন। এই ব্যায়ামটি আপনার মেরুদণ্ডের চারপাশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে।

৭।




কোবরা পোজ ঃ

মুখ নিচু করে শুয়ে পড়ুন,দুই পা এক সাথে জোড়া লাগিয়ে হাত কোনই শরীরের সাথে লাগিয়ে রাখুন এরপর লম্বা শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে মাথা উপরে তুলুন কোমর পর্যন্ত। হাত ভাঁজ করবেন না। দশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। পাঁচ থেকে ছয় রেপিটেশন করতে পারেন।


এতে করে আপনার কোমরে ব্যথা ও ঘাড়ের ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।




৮।থ্রেড দ্য নিডল পোজ 

এই যোগব্যায়ামের ভঙ্গি মেরুদণ্ড এবং কাঁধে টান প্রকাশ করে। হাঁটু গাড়িয়ে ছবির মত করুন, একটি হাত বিপরীত বাহুর নীচে স্লাইড করুন, আপনার কাঁধ এবং কান মাটিতে রেখে দিন। গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং দিক পরিবর্তন করুন।



৯।স্পাইনাল টুইস্ট

প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, আপনার হাঁটুকে আপনার বুকে আনুন এবং আস্তে আস্তে তাদের একপাশে নামিয়ে দিন। আপনার কাঁধ মাটিতে রাখুন এবং প্রসারিত ধরে রাখুন। অন্য দিকে একই পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করুন.
স্পাইনাল টুইস্ট যোগব্যায় মেরুদন্ডের গতিশীলতা বাড়ায় এবং মেরুদন্ডকে নমনীয় করে।



১০।ওয়াল এঞ্জেলস

একটি দেয়ালের সাথে আপনার পিঠ দিয়ে দাঁড়ান এবং আপনার বাহুগুলি কাঁধের উচ্চতায় উচু করুন। প্রাচীরের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে ধীরে ধীরে আপনার বাহু উপরে এবং নীচে সরান। এই ব্যায়াম আপনার কাঁধ এবং পিছনের পেশী সক্রিয় করে পিঠের ব্যথা উপশম করে।


১১।শোল্ডার ব্লেড স্কুইজ

বসা বা দাঁড়ানোর সময়, আপনার কাঁধের ব্লেডগুলি একসাথে চেপে নিন। কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন। এই সাধারণ ব্যায়াম কুঁজো ভঙ্গি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে যা পিঠের ব্যথায় অবদান রাখে।এটি ওয়াল ছাড়াও করতে পারেন।


১২সাঁতার কাটা ও দ্রুত হাঁটা

সাঁতার বা দ্রুত হাঁটার মতো ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকা আপনার পিঠে চাপ না দিয়ে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালনকে উৎসাহিত করে, যা নিরাময়ে সহায়তা করে এবং ভবিষ্যতে ব্যথা প্রতিরোধ করে।


কোমরের ব্যথা নিরাময়েব্যায়ামের ভূমিকা

নিয়মিত ব্যায়ামে জড়িত হওয়া কোমরের ব্যথা পরিচালনা এবং প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম পেশী শক্তিশালী করতে, নমনীয়তা উন্নত করতে এবং ভারসাম্যহীনতা সংশোধন করতে সাহায্য করে, যার ফলে মেরুদণ্ডের ভাল সমর্থন এবং অস্বস্তি কম হয়। মনে রাখবেন, ধারাবাহিকতা দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল অর্জনের চাবিকাঠি।



প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

প্রশ্ন: আমার যদি ইতিমধ্যেই পিঠে চোট থাকে তবে আমি কি এই ব্যায়ামগুলি করতে পারি?

👉উত্তর: যেকোনো ব্যায়ামের রুটিন শুরু করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা ভাল, বিশেষ করে পূর্বে বিদ্যমান অবস্থার সাথে। 

প্রশ্নঃ এই ব্যায়ামগুলো আমার কত ঘন ঘন করা উচিত?

👉উত্তর:সপ্তাহে কমপক্ষে 3-4 বার লক্ষ্য রাখুন, তবে আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং সেই অনুযায়ী সামঞ্জস্য করুন।

প্রশ্ন: দুর্বল ভঙ্গি কি সত্যিই পিঠে ব্যথা হতে পারে?

👉উত্তর: হ্যাঁ, দুর্বল ভঙ্গি আপনার মেরুদণ্ড এবং পেশীতে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেয়, যার ফলে অস্বস্তি হয়।সুপারিশের জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় এই ব্যায়ামগুলো করা কি ঠিক?

👉উত্তর: গর্ভাবস্থায়, আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য নিরাপদ তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো নতুন ব্যায়াম করার চেষ্টা করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url