যোগব্যায়াম করার পদ্ধতি ও উপকারিতা/Benefits of Yoga
যোগব্যায়াম করার পদ্ধতি ও উপকারিতা/Benefits of Yoga
ভূমিকাঃ
যোগব্যায়াম কথাটা শুনলে কেমন মনে হয় যেন এর সাথে যোগের কোন সম্পর্ক আছে কি না ।আসলে ঠিক তেমনটা না যোগব্যায়াম মূলত একটি শারীরিক ব্যায়াম যা ইয়োগা নামে পরিচিত। মূলত যোগব্যায়ামের উৎপত্তি হয় ভারতে। যোগ ব্যায়াম ভারতের একটি প্রাচীন অনুশীলন ।স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য সামগ্রিক পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।যোগব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে একটি মানুষের শারীরিক মানসিক যাবতীয় সমস্যা গুলোকে সমাধান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা একটি সুস্থ মানুষের জন্য যোগ ব্যায়াম করা বিশেষ প্রয়োজন। আজকে আমরা এই ব্লকে যোগব্যায়ামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব এবং যোগ ব্যায়ামের কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। আশা করি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।
যোগাসনের পদ্ধতিঃ
যোগাসনের নানা রকম পদ্ধতি রয়েছে এর সঠিকভাবে নিয়ম মেনে না চললে ফলাফল শূন্য থেকে যায়। যোগাসনের ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সঠিক নিয়ম মেনে যোগাসন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন দেখে নিই যোগাসনের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ছবিসহ।১। পদ্মাআসনঃপদ্মাসন যোগ আসনের একটি খুবই পরিচিত পদ্ধতি। আমরা কমবেশি এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি। এ যোগ ব্যায়ামের নাম পদ্মাসন বলার মূলত কারণ হচ্ছে এর বসার ভঙ্গিমা এমন ভাবে যেন পদ্ম ফুলের পাপড়ি মত দেখা যায়। এই আসনের ক্ষেত্রে প্রথমে বাম উরুর উপর ডান পা এবং ডান উরুর উপর বাম পা এমন ভাবে রাখতে হবে যেন দুই হাটু মাটিতে সমানভাবে লেগে থাকে। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে এরপর দুই হাত সোজা করে হাঁটু বরাবর রাখতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ভাবে রাখতে হবে। এভাবে সময় নিয়ে আপনি যতক্ষণ খুশি করতে পারেন।
পদ্ম সনের কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। এর মাধ্যমে শরীর ও মনের বিশেষ প্রভাব ফেলে এটি মেরুদন্ড সোজা রাখতে সাহায্য করে শরীরের বিভিন্ন অংশ নিতম্ব, যকৃত মুত্রাশয় সক্রিয় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেট ফাঁপা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি বিভিন্ন পেটের রোগ থেকে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে। এই আসনের মাধ্যমে পেটের চর্বি কমে দেহের প্রতিটা শিরা-উপশিরা ধমনীর স্নায়ু পেশি সুস্থ রাখে।
২। ভুজঙ্গাসনঃভুজঙ্গাসন বা কোবরা পোজ যোগাসনের একটি বিশেষ ব্যায়াম। এ আসনে কোবরা সাপের মত ফনা তুলতে হয়। প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটি সোজা রেখে হাত দুটি বুক বরাবর মাটিতে রেখে মাথা উপরে উঠাতে হয়। হাতে সম্পূর্ণ ভার না দিয়ে শরীরের উপর ভর দিতে হবে। এই অবস্থান ১ মিনিট পর্যন্ত করা যেতে পারে।
এই আসনের নিয়মিত অভ্যাস করলে বুকের গঠন সুগঠিত হয় হৃদপিণ্ড পেশি এবং ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই আসনের গুরুত্ব অনেক বেশি এই আসনের অভ্যাস করার ফলে মেয়েদের ডিম্বাশয় রক্ত চলাচল বেড়ে যায় যার ফলে জরায়ু বিভিন্ন রোগ হতে রক্ষা করে।
৩।সেতুবন্ধ আসনঃসেতুবদ্ধ আসন বা ব্রিজ পোজ যেভাবে করবেন প্রথমেই শুয়ে পড়ুন। আস্তে আস্তে পা ভাজ করে নিবেন। আপনার হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালি যেন সোজা হয়ে থাকে হাত দুটো মেঝেতে সোজা হয়ে বডি সম্পন্ন ব্রিজের মত ভেসে থাকবে। এ সময় পুরো শরীরের ওজন ভর করে পায়ের গোড়ালি কাঁধ এবং বাহুর উপর। এ আসনটি এক মিনিট ধরে করা যেতে পারে।
এ আসনের উপকারিতা ফুসফুসকে সক্রিয় করে তোলে এবং থাইরয়েডের সমস্যা কমায়। হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে; মেনোপজ এবং মাসিক ব্যথার উপসর্গ উপশম করতে এই ব্যায়ামটি প্রভূত সহায়ক । এছাড়া হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, অস্টিওপোরোসিস এবং সাইনোসাইটিসে এই আসনটি খুবই কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে ।
৪।ধনুরাসনঃধনুরাসন প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন । পাট দুটো গোড়ালি থেকে ভাজ করুন আপনার হাত দুটো দিয়ে পায়ের গোড়ালি চিপে ধরুন এবং আস্তে আস্তে টানুন যাতে ধনুকের মতো হয়ে থাকে। এ সময় আপনার সম্পূর্ণ বডি উপরে উঠে আসবে শুধু পেট মেঝেতে থাকবে। দৃষ্টিশক্তি সামনের দিকে থাকবে এ সময় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে। এ আসন টি ৪০ সেকেন্ডের মত অবস্থান করুন ।যে সকল মানুষই এ আসন থেকে বিরত থাকবেন গর্ভবতী মহিলা এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।
এ আসনের উপকারিতা ফুসফুস এবং বুক প্রসারিত করে মেরুদন্ডের হাড় শক্তিশালী রাখে। নিয়মিত অভ্যাস করলে বুকের পেশী এবং পাঁজরের হাড় বৃদ্ধি পায় এবং বুক সুগঠিত হয়।
৫।বৃক্ষাসনঃবৃক্ষের
মতো
দাঁড়িয়ে
থেকে
এ
আসন
করতে
হয়
এর
ফলে
নাম
হয়েছে
বৃক্ষাসন।
প্রথমে
সোজা
হয়ে
দাঁড়ান
দুই
পায়ের
মাঝখানে
২
ইঞ্চি
বরাবর
ফাঁকা
রাখুন।
এরপর
ডান
পা
ভাজ
করে
বাম
পায়ের
হাঁটুর
উপরে
উরু
বরাবর
স্থাপন
করুন।
হাত
দুটো
নমস্কার
ভঙ্গিতে
মাথার
উপরে
সোজা
হয়ে
রাখুন।এর
মাঝে
পা
বদল
করে
নিতে
পারেন। বুক
ভরে
শ্বাস
নেবেন।
এ
আসন
৫
থেকে
১০
মিনিট
করতে
পারেন।
এ ব্যায়াম শরীরের ভারসাম্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া হাত ও পায়ের মেদ, পায়ের দুর্বলতা, বাত এবং পা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি হার্নিয়া উপশম এ সাহায্য করে।
৬।অর্ধচক্রাসনঃএ
আসনের
মাধ্যমে
শরীরকে
অধ্য
চক্র
করতে
হয়।
এ
আসনটির
জন্য
সোজা
হয়ে
দাঁড়ান
এবং
আপনার
হাত
দুটো
পিছন
দিক
দিয়ে
কোমরে
শক্ত
করে
চেপে
ধরুন।
এরপর
শরীরের
ভারসাম্য
অনুযায়ী
পিছনের
দিকে
ঝুলতে
থাকুন।
এ
সময়
শ্বাস-প্রসার
স্বাভাবিক
রাখার
চেষ্টা
করবেন।
এ
আসনটি
আপনার
ধৈর্য
অনুযায়ী
১
থেকে
দেড়
মিনিট
করতে
পারেন।
এ আসন অনুশীলনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। যকৃত মূত্রাশয় সক্রিয় রাখে মেরুদন্ড নমনীয়তা এবং পিঠের হার শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়। দেহকে সুন্দর ও সুঠাম করে তোলে।
৭।শবাসনঃমৃত মানুষের মতো শুয়ে থেকেএ আসন করতে হয় এর জন্য এর নাম শবাসন পদ্ধতি। প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর হাত এবং পা দুটোকে মেঝে বরাবর সমানভাবে একটু ফাঁকা করে রাখুন। এমনভাবে শুয়ে থাকবেন যেন আপনাকে মৃত মানুষ মনে হয়। শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখবেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। এবং সব আসনের শেষে এই আসনটা করার চেষ্টা করবেন। যতটুকু সময় নিয়ে করতে পারেন।
এ
আসনের
বিশেষ
উপকারিতা
রয়েছে।
এ
আসনে
র
ফলে
আপনার
শরীরের
সমস্ত
ক্লান্তি
দূর
করবে।
অবসাদ
উত্তেজনা
এবং
ঘুম
কম
হওয়া
থেকে
শরীরকে
নতুন
কর্মশক্তি
ফিরিয়ে
আনতে
বিশেষ
ভূমিকা
পালন
করে।
এছাড়া
যোগ
ব্যায়ামের
আরো
কিছু
বিশেষ
উপকারিতা
হলোঃ
শারীরিক
নমনীয়তা:
যোগব্যায়ামের
নিয়মিত
অনুশীলন
পেশী
প্রসারিত
এবং
দীর্ঘ
করার
মাধ্যমে
নমনীয়তা
উন্নত
করে,
আঘাতের
ঝুঁকি
হ্রাস
করে
।
স্ট্রেস
হ্রাস:
যোগব্যায়াম
শিথিলকরণ
কৌশলগুলিকে রপ্ত করে
যা
মননশীলতা
প্রচার
করে
এবং
মনকে
শান্ত
করে
স্ট্রেস,
উদ্বেগ
এবং
উত্তেজনা
কমাতে
সাহায্য
করে।
ব্যথা
উপশম: যোগব্যায়াম
ব্যথা
উপশমের
ক্ষেত্রে
খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
পিঠে
ব্যথা
বাত
ব্যথা
মাইগ্রেন
ব্যথায়
যোগব্যায়াম
সবার
জন্য
যথেষ্ট
ভূমিকা
পালন
করে।
কার্ডিওভাসকুলার
স্বাস্থ্য:
যোগব্যায়ামের
গতিশীল
রূপ,
যেমন
ভিনিয়াসা,
হৃদস্পন্দন
বৃদ্ধি
করে
এবং
সঞ্চালন
উন্নত
করে
কার্ডিওভাসকুলার
সুবিধা
প্রদান
করে।
মানসিক
স্বচ্ছতা:
যোগব্যায়ামের
মননশীলতা
এবং
ধ্যানের
দিকগুলি
মানসিক
স্বচ্ছতা,
ফোকাস
এবং
জ্ঞানীয়
কার্যকারিতা
বাড়ায়।
ভালো
ঘুম:
যোগব্যায়ামের
শিথিলকরণ
কৌশল
এবং
মননশীল
শ্বাস-প্রশ্বাস
ঘুমের
গুণমান
উন্নত
করতে
এবং
অনিদ্রা
নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা
করতে
পারে।
শেষ কথাঃএকটি
শারীরিক
ও
সুস্থ
মানসিক
জীবন
যাপনের
ক্ষেত্রে
যোগব্যায়াম
প্রতিটি
মানুষের
জীবনে
একটি
গুরুত্বপূর্ণ
পদ্ধতি।
৫
থেকে
৬
বছরের
শিশু
এবং
৮০-৯০
বছরের
বৃদ্ধ
যে
কোন
বয়সে
এ
আসন
মানুষ
করতে
পারে।
সকাল
সন্ধ্যা
গোসলের
পূর্বে
কিংবা
রাতে
যে
কোন
সময়
যোগ
ব্যায়াম
করা
যায়
তবে
খাবার
তিন
থেকে
চার
ঘণ্টা
পর
যোগব্যায়াম
করা
উচিত।
তবে
সঠিক
নিয়ম
মেনে
যোগ
ব্যায়াম
না
করলে
উপকার
থেকে
ক্ষতির
সম্ভাবনা
বেশি
যোগব্যায়ামে
আপনাকে
অবশ্যই
কিছু
বিষয়
মেনে
চলতে
হবে
যেমন,
কখনোই
একবারে
সাত-আটটির
বেশি
আসন
করা
যাবে
না
এবং
এর
ফাঁকে
বিশ্রাম
নিতে
হবে
এবং
ইয়োগা
ম্যাট
কিংবা
কম্বল
নরম
কাপড়
যোগ
ব্যায়ামের
সময়
ব্যবহার
করতে
হবে।
এমন
কোন
আসন
করা
যাবে
না
যা
আপনার
শরীরের
জন্য
একদমই
উচিত
না।
গর্ভাবস্থায়
যোগব্যায়াম
করতে
চাইলে
অবশ্যই
ডাক্তারের
সাথে
পরামর্শ
নিতে
হবে।
FAQs
যোগব্যায়াম কি সব বয়সের জন্য উপযুক্ত?
একেবারেই! যোগব্যায়াম শিশু থেকে বয়স্ক সকল বয়সের ব্যক্তিদের জন্য মানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
যোগব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে?
যদিও যোগব্যায়াম শারীরিক সুস্থতার উপর নির্ভর করে। তবে কিছু কিছু যোগ ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।।
যোগব্যায়ামের জন্য কোন সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
মৌলিক যোগব্যায়ামের জন্য শুধুমাত্র একটি মাদুর প্রয়োজন, তবে ব্লক এবং স্ট্র্যাপের মতো অতিরিক্ত প্রপস আপনার অনুশীলনকে উন্নত করতে পারে।
কত সময় পর পর যোগ ব্যায়াম করা উচিত?
প্রথম সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এবং ধীরে ধীরে এটি বাড়ানো যেতে পারে।।
যোগব্যায়াম পদ্ধতি কি?
যোগ অনুশীলন হল একটি সামগ্রিক পদ্ধতি যা সুস্থতা, ভারসাম্য এবং অভ্যন্তরীণ শান্তিকে উন্নীত করার জন্য শারীরিক ভঙ্গি, শ্বাস নিয়ন্ত্রণ, ধ্যান এবং নৈতিক নীতিগুলিকে একত্রিত করে।
আমরা যোগাসন করি কেন?
আমরা শারীরিক নমনীয়তা, শক্তি এবং ভারসাম্য বাড়াতে যোগব্যায়াম করি, পাশাপাশি মানসিক স্বচ্ছতা, স্ট্রেস হ্রাস, মানসিক সুস্থতা এবং অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতির অনুভূতি প্রচার করি।
যোগাসন করলে কি উপকার হয়?
যোগব্যায়ামের সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে উন্নত নমনীয়তা, বর্ধিত শক্তি, ভাল অঙ্গবিন্যাস, চাপ হ্রাস, মননশীলতা বৃদ্ধি, উচ্চ শিথিলতা, উন্নত ভারসাম্য, উন্নত প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতা বোধ।